ঢাকা শহরে রিকশার জন্য পথচারীরা ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না। এরা এমনভাবে রিকশা চালায় যে তাদের কোনো ব্রেক নেই। তারা রিকশাকে বিমানের মতো নিয়ে ছুটে চলে। পথচারীকে রাস্তা পার হতে দেওয়ার জন্য মন্ত্রীর গাড়ি ব্রেক করলে, রিকশা ব্রেক করে না। অধিকাংশ রিকশার বেল বা হর্ন নাই। আপনার গায়ের উপর তুলে দিবে, দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে আপনার লাফিয়ে পড়তে হবে রাস্তার সাইডে চাপার জন্য। তাও রাজপথের উড়োজাহাজ থামবে না। কোনো অলিগলিতে যদি পর্যাপ্ত জায়গা না থাকে আপনার পায়ের উপর রিকশার চাকা তুলে দিবে। তবুও তারা যাবেই।
একবার আমার সঙ্গে এমনটা হয়েছিল আজিমপুরে। এক রিকশাচালক চায়নাবিল্ডিংয়ের গলিতে মানুষের ভিড়ে আমার পায়ের উপর চাকা উঠিয়ে চলে গেছে। লোকটা বৃদ্ধ না হলে যদি নাও মারি একটা গালি হয়তো রাগে ক্ষোভে মেরে ফেলতাম। কিন্ত কিছুই করিনা। পা য়ে প্রচন্ড ব্যথ্যা নিয়ে অনেক কষ্টে বাসায় ফেরা। স্যান্ডেলও ছিড়ে গেছিলো।
ছবিতে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন একটি রিকশায় একাধিক লুকিং গ্লাস। এই আনকমন রিকশাটির দেখা মেলে কিছুদিন আগে মতিঝিলে আমার পূর্বপশ্চিম নিউজের অফিসের সামনে। রিকশাটি দেখে চালককে থামিয়ে কয়েকটা ছবি তুলি। তাকে জিজ্ঞাস করলাম ঢাকায় যেসব রিকশা চলে একটাও লুকিং গ্লাস নাই। আপনি এতো গুলো লুকিং গ্লাস কেন লাগাইছেন। উনি বললো এমনেই, শখে লাগাইছে।
রিকশায় কেনো লুকিং গ্লাস দরকার? দরকার এইজন্য যে ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় এরা হঠাৎ করে ডান দিক থেকে বামে চাপে। আবার বাম দিক থেকে ডানে চাপে। এরা যে কখন কোনদিকে মোড় নিবে পেছনে থাকা বাস- প্রাইভেটকার বা মোটরসাইকেল চালকের বুঝার উপায় নাই। বলতে গেলে একেবারে শতভাগ রিকশার লুকিং গ্লাস নাই। তারা পেছনে কোনদিক থেকে কি গাড়ি আসতেছে দেখতে পারে না। আমার সঙ্গে বঙ্গভবনের সামনে এমন অনেকবার হইছে। হঠাৎ করে বাম দিক থেকে রিকশা ডান দিকে চলে আসে, এক্সিডেন্ট এই হবে হবে অবস্থা। কিন্তু আল্লাহ বাঁচাইছে। অনেকসময় দেখবেন তারা পুরো রাস্তাই দখল করে আছে, লাইন ধরে চলে না। ফলে অন্যগাড়িগুলো যেতে পারে না। তাছাড়া ট্রাফিকপুলিশদের সঙ্গে লিয়াজো করে এসব রিকশা অহরহ রং সাইডে চলে। যেটা দুর্ঘটনার শঙ্কা আর যানজট আরও বাড়ায়। অনেকে হয়তো বলতে পারেন যে রিকশার সাথে কি দুর্ঘটনা হয়। রিকশার সাথে না হলেও রিকশার জন্য হয়। তাদের বেপোরোয়া চালনার জন্য আপনার গাড়ি আরেকটা গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
শুধু ঢাকা শহর নয়, গ্রামাঞ্চলেও রিকশা অতি প্রয়োজনীয় বাহন। এই শহরে সবার নিজস্ব গাড়ি নাই। রিকশা ছাড়া অধিকাংশ মানুষ অচল। আর রিকশা চালিয়ে যারা জীবীকা নির্বাহ করে তাদেরও তো খেয়ে পরে বাঁচতে হবে। তাই এসব রিকশা ও চালকদের সুন্দর সুশৃঙ্খল নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। প্রয়োজনে আলাদা লেন, লুকিং গ্লাস, বেল বা হর্ন আরও যা যা দরকার থাকতে হবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এই রিকশা চলাচল ব্যবস্থাকেও ঢেলো সাজানো অত্যন্ত জরুরি।
লেখা: সজিব খান, সাংবাদিক।