Home » বাংলাদেশের হিন্দুরা কেনো ভারতীয় মুসলিমদের মতো প্রতিবাদ করতে পারে না

বাংলাদেশের হিন্দুরা কেনো ভারতীয় মুসলিমদের মতো প্রতিবাদ করতে পারে না

by admin

ভারতের কর্ণাটকে স্কুল-কলেজে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরে ঢুকতে না দেওয়াকে কেন্দ্র করে তুমুল বিতর্ক ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি চলছে। হিজাব পরার অধিকার চেয়ে আন্দোলন করছেন ছাত্রীরা। বাংলাদেশেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। ধর্মীয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেক সময় সমালোচনাকে সহিসংতায় রূপ নিতেও দেখা যায়। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে নানা কারণে বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা অনেকটাই কমে এসেছে। এসব বিষয়ে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এবং ক্যালিফোর্নিয়া আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি সূবর্ণ নন্দী তাপস। টেলিফোনে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বীর বাঙালি’র বিশেষ প্রতিবেদক সজিব খান

ভারতে হিজাব নিয়ে চলমান বিতর্কের বিষয়ে সূবর্ণ নন্দী তাপস বলেন, ধর্মীয় ব্যাপারগুলোতে বাংলাদেশ ভারত এবং পাকিস্তান এই তিনটি দেশের সবসময়ই কম বেশি বাড়াবাড়ি আছে। এ ধরনের ঘটনা কারোই কাম্য নয়। এছাড়া আমি হিজাবের বিপক্ষে না আবার গেরুয়ার পক্ষেও না। এসব বিষয় নিয়ে মোটেই বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়। তবে কোথাও যদি নির্দিষ্ট কোনো ড্রেসকোড থাকে, তবে সেটা সব ধর্মের লোকেরই মানা উচিত। এখানে হিন্দুরা যদি বলে আমরা গেরুয়া বা ধূতি পরবো। একইভাবে মুসলিমরাও যদি বলে তারা পাঞ্জবি পরবে। তাহলে দুটোই হবে গোরামি। আর ড্রেসকোড যদি না থাকে তবে যে যার পছন্দমতো পোশাক পরবে। এ নিয়ে হিন্দু বা মুসলিম কারোই কোনো কটাক্ষ বা বিরোধীতা করা সমিচিন নয়। একে অপরের ধর্ম এবং পোশাককে সম্মান করতে হবে।

তিনি বলেন, ধর্মান্ধতা মানুষকে তিলে তিলে ক্ষয় করে। আজকে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের অবস্থা দেখুন। ভারত যদি এই জায়গা থেকে বেরিয়ে না আসতে পারে তবে তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না। যেটা গান্ধীজী চেয়েছিলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন। এখন ওই জায়গাটিতে যেতে হলে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না। সব ধর্মই শান্তির কথা বলে। কিন্তু ধর্মান্ধরা অশান্তি সৃষ্টি করছে। এসব তাদের মানসিকতার সমস্যা। ধর্মের কিন্তু কোনো দোষ নেই। আফগানিস্তানে এখন অন্য ধর্মের কোনো লোক নেই তারপরও তারা সহিসংসতামূলক কর্মকাণ্ড করছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে সূবর্ণ নন্দী তাপস বলেন, বাংলাদেশ আজকে যেভাবে হিন্দুশূণ্য হচ্ছে। এর ফল কখনো ভালো হবে না। এর দায় শুধু ধর্মান্ধ জঙ্গিগোষ্ঠির নয়, সবাইকে নিতে হবে, এমনকি সরকারকেও। হিন্দু কমে যাওয়ার বিষয়টি যদি বন্ধ করতে না পারে তার জন্য ভবিষ্যতে সরকার এবং জনগণ সবাইকে মাশুল দিতে হবে। যেখানে স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ হিন্দু ছিলো, সেখানে আজকে মাত্র ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু ভারত থেকে কখনো কোনো মুসলিম বাংলাদেশে বা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে চলে গেছে এমন কোনো রেকর্ড নেই। ভারতে মুসলিমদের সংখ্যা ধীরেধীরে বাড়ছে এবং সেখানে তারা নিজেদের অধিকার যুদ্ধ করে হোক বা যেভাবেই হোক আদায় করে নিচ্ছে।

তিনি বলেন, কর্ণাটকে হিজাব পরা একজন ছাত্রী যেভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে, তার প্রতিবাদী কণ্ঠের সঙ্গে আমি একাত্মতা পোষণ করি। দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের হিন্দুরা এভাবে প্রতিবাদ করতে জানে না। এছাড়া তারা বাংলাদেশকে নিজের দেশ মনে করে না। যদি নিজের দেশ মনে করতো তবে এখানে হিন্দুদের সংখ্যা এতো কমতো না এবং তাদের ওপড় অন্যায় অত্যাচারও বাড়তো না। কিছু হলেই বাংলাদেশের হিন্দুরা ভারতে চলে যাওয়ার পথ বেছে নেয়। এতে করে মাতৃভূমির প্রতি তাদের মমত্ববোধহীনতা প্রকাশ পায়। তারা নিজেদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে কেন নিজ দেশ ছেড়ে ভারতে রোহিঙ্গা হয়ে থাকতে চায় আমি বুঝি না।

‘আরেকটা বিষয় হলো আপনি যতোই শক্তিশালী বা ক্ষমতাবান হোন না কেন, নৌকা নিয়ে জাহাজের সাথে পাল্লা দিলে হারার সম্ভাবনাই ৯৯ শতাংশ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। হয়তো জাহাজের হারার সম্ভবাবনা ১% থাকবে। আজকে যেসব প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশে যদি সঠিক ব্যক্তিদের যাকে যেই দায়িত্ব দেওয়া দরকার সেটা দেওয়া হতে তাহলে এমন অবস্থা হতো না।’- যোগ করেন সূবর্ণ নন্দী তাপস।

তিনি বলেন, আমেরিকা যদি সকল ধর্ম ও সকল দেশের মানুষের স্বাধীনতা এবং সকল আমেরিকানদের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে না পারত। তাহলে নিজের দেশ বাবা-মা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজন রেখে আমরা এখানে এসে থাকতাম না।

You may also like

Leave a Comment